রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন—কমল হীরের পাথর হচ্ছে বিদ্যে, আর তার ছটা হচ্ছে কালচার। কালচার বা সংস্কৃতি সম্বন্ধে আমাদের যে চিন্তা ভাবনা আছে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সংস্কৃতির কোনো পরিমানগত মাপকাঠির কথা ভাবাই যায়না। আজকের দিনে বিজ্ঞানীরা কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে কালচারের পরিমাণগত (quantitative) বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন। এই গবেষণার নাম Culteromics। মূলতঃ পদার্থবিদ্যার বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব-এর সাহায্য নিয়ে এটা করা হয়। সংস্কৃতির একটি মূলবাহক ভাষা। এর সাথে মন এবং মস্তিষ্কের সম্পর্ক নিয়ে কৌতুহল বরাবর থাকলেও অধুনা বিজ্ঞানের গবেষণা নতুন ভাবনায় যোগান দিচ্ছে। দেখা গেছে Shakespeare এর লেখা থেকে শুরু করে অনেক কালজয়ী লেখা বিশৃঙ্খলার (chaos) জটিল নিয়ম মেনে চলে। ভাবতে অবাক লাগারই কথা। আমরা একটু গভীরে চিন্তা করলে বুঝতে পারি, যে মাথা এবং মন দিয়ে জটিল অঙ্ক করি—সেই মাথা মন দিয়ে কালজয়ী সাহিত্য লিখি। আসলে ভাষা, সংগীত, সাহিত্য সবই মস্তিষ্কের এক জটিল প্রক্রিয়া থেকে উদ্ভূত হয়। গত কয়েক দশকে এই ধরনের বিষয় বিজ্ঞানীদের কাছে প্রাধান্য পেয়েছে গবেষণার ক্ষেত্রে। পশ্চিম দুনিয়ায় –উইলিয়াম শেকসপিয়ারের (William Shakespeare ) কাজ দিয়ে প্রথম শুরু হয় ‘দেখা’ সাহিত্যের গঠনতন্ত্রে কোনো জ্যামিতিক ছন্দ আছে কিনা। এর জন্যে যে বিশ্লেষণ পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয় তার নাম ফ্র্যাকটাল (Fractal) পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মূল বিষয়গুলো কি দেখা যাক।

আধুনিক গবেষণা বলছে—জগৎ সংসারে সমস্ত প্রক্রিয়া Self-similar বা স্ব-সাদৃশ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সহজে বোঝনো যাক একটা ফুলকপির উদাহরণ দিয়ে – একটা গোটা ফুলকপি যে রকম তার সব ছোট ছোট অংশ সেরকমই, যতই ছোটো করি না কেন। একেই বলে স্ব-সাদৃশ্য। ফুলকপির বেলায় এটা চোখ দিয়ে দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু অন্য যে কোন প্রক্রিয়া এইভাবে সহজে বোঝা না গেলেও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর যতই করিনা কেন একই চেহারার পুনরাবৃত্তি হয়। এই সাদৃশ্য কতটা তা পরিমাণও করার পদ্ধতি বেরিয়েছে। আমাদের মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, পরিপাক যন্ত্র সব কিছুতেই সাদৃশ্য এর নিদর্শন পাওয়া গেছে। এমন কি চৈতন্য (Consciousness) এর বেলায়ও। সংগীত, সাহিত্য শিল্প সবই মস্তিষ্কের আন্ত ক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ-সেইজন্যই সংগীত সাহিত্য ও শিল্পেও একটা স্ব-সাদৃশ্যর নিদর্শন থাকবে যা পরিমাণগতভাবে নির্ণয় করিবার চিন্তাভাবনা হচ্ছে।
স্ব-সাদৃশ্য (Fractal) জ্যামিতি এক নতুন এবং আধুনিক পদ্ধতি যা দিয়ে প্রাকৃতিক বস্তুকে নতুন দৃষ্টিকোন থেকে বিশেষ বিশ্লেষণ করা যায়। এই বিশ্লেষণ পদ্ধতি সাহিত্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। বলা নিষ্প্রয়োজন যে,–ইংরেজী সাহিত্যে Shakespeare এর কাজ এই পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্যের স্ব-সাদৃশ্য (Fractal) পরিমিতি হিসাব করা হয় প্রতিটি বাক্যে কতগুলো শব্দ আছে তার হিসেব থেকে। সাহিত্যের আগে সংগীতেও এই ধরনের বিশ্লেষণ করা হয়। বিজ্ঞানীরা ভাবছেন যে মানুষের ভাষা আসলে মস্তিষ্কে অর্ন্তগঠনের প্রতিফলন, এই কারণেই ভাষা নিয়ে এই ধরনের গবেষণা অত্যন্ত জরুরী। আজকের দিনে বিভিন্ন বিজ্ঞানের শাখায় যেমন পদার্থবিদ্যা এবং জটিল পদ্ধতি (complex system) এবং তথ্য বিজ্ঞান (Information Science) ভাষা নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। বই এর মধ্যে যেমন দেখা যায়,—একসাথে থাকা দুটো অক্ষর কয়েকশো অক্ষরের পরে – আবার সেই দুটো অক্ষর নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক থাকতে পারে নাও থাকতে পারে। দেখা গেছে এ-রকম পরপর সম্পর্ক, পরিচ্ছেদ কিংবা অধ্যায়ের অন্য পরিচ্ছেদ কিংবা অন্য অধ্যায়েরও থাকতে পারে। আবার বাক্যের মধ্যে কটা শব্দ আছে তা বিশ্লেষণ করে বের করা যায় এই শব্দগুলি অনেক দূরবর্তী শব্দের সাথে কিরূপ সম্পর্কযুক্ত। ৩0টি ইংরেজী সাহিত্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে সবকটি স্ব-সাদৃশ্য (Fractal) প্রকৃতি। এটাও দেখা গেছে কোনো দুটি বইয়ে স্ব-সাদৃশ্য (Fractal) প্রকৃতি একদম একরকমের। এছাড়া ইংরাজী, ইটালিয়ান, ফরাসী, জার্মান, পোলিশ, রাশিয়ান, স্পেনের বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ভাষার ও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ১00টি বিখ্যাত বই বিশ্লেষণ করেছেন। বিজ্ঞানীরা এর মধ্যে রয়েছেন বিখ্যাত লেখক কোনান ডয়েল, বালজা্ক, চার্লস ডিকেন্স, দন্তয়েভিস্কি, ইলিয়ট, জেমস জয়েস, ভিক্টর হুগো, শেক্সপিয়ার, টলস্টয়, উল্ফ ইত্যাদি। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাক্যগুলির বৈশিষ্ট্য (যেমন শব্দসংখ্যা) বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন—একটি সুন্দর জ্যামিতিক জটিলতা বইগুলিতে পাওয়া গেছে, যা প্রকৃতিতে সবত্র বিদ্যমান। এই গবেষণা এও ইঙ্গিত করে যে, কোনো বই না পড়েই এই পদ্ধতিতে বলা সম্ভব বইটি কোন গোত্রীয় সামাজিক, ট্র্যাজেডি না কমেডি ইত্যাদি। আরও মজার কথা, কোনো কোনো বইয়ে যেখানে চরিত্রগুলো নিয়ে ভাবনা চিন্তাধারার পরিবেশনা আছে, সেখানে সেই বইগুলো শুধুমাত্র স্ব-সাদৃশ্য (Fractal) চরিত্রের নয়, স্ব-স্বাদৃশ্য (Fractal)-এর চেহারাটা এক জায়গায় এক রকম যেটাকে বলে বহুবিভিক্ত স্ব-সাদৃশ্য (Multifractal)। এর উদাহরণ বিশ্ববিখ্যাত জেমন জয়েস এর বই ‘Finnegaus Wake’। যে বইটাকে কেউ বলে অসাধারণ, কেউ বলে পাগলামি। বইটি পুরোপুরি মালটিফ্যাকটাল চরিত্রের এরকম বই আর‍ও আছে

এই গবেষণা এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলছে—তা হলে কি মহৎ লেখকদের অচেতনভাবে হলেও ক্ষমতা আছে ব্রহ্মাণ্ডের গঠন (structure) সম্পন্ধে অবহিত হওয়া ? সাথে সাথে এটাও চমকপ্রদ মনে হচ্ছে কি করে রাশিতত্ত্বের এই জটিল বিশ্লেষণ বইটির বিষয়বস্তুর গোত্র নির্ধারণ করতে পারছে ? বিজ্ঞানীদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন একদল নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ্। এই প্রক্রিয়ায় কালজয়ী লেখকদের লেখা বিশ্লেষণ করলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উন্মোচিত হবে। যেমন লেখকের মনোভাব এবং সময়ের সাথে গতিপ্রকৃতি, সমাজব্যবস্থা, ঐতিহাসিক পটভূমি, মস্তিষ্কের সৃজনশীল ক্ষমতার পরিবর্ত্তন বা পরিবর্দ্ধন আরোও অনেক অজানা তথ্য। যেভাবে বস্তু জগৎ নিয়ে বিজ্ঞান অনেক চমকপ্রদ অজানা তথ্য আবিষ্কার করেছে, সংগীত, শিল্প, সাহিত্যের অনুরূপ বিশ্লেষণ মস্তিষ্কের কার্য্যপ্রণালী সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তথ্য জানা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এবার রবীন্দ্রনাথের লেখা নিয়ে অনুরূপ বিশ্লেষণ ও করা হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে, রবীন্দ্রনাথের লেখার পাতায় বাদ দেওয়া অংশকে কাটাকুটির ব্যবহারে একটি নিটোল জ্যন্ত রূপের সন্ধানের খোঁজ নিয়েছিলেন। পাণ্ডুলিপির লেখার চারিদিকে ঘিরে লতাপাতার মত চিত্র গড়ে উঠেছে তা অনবদ্য, অসাধারণ, নান্দনিক। একটু তলিয়ে অন্যভাবে ভাবলে ঐ পাণ্ডুলিপিতে লেখা দিয়ে যে ভাবগুলোকে প্রকাশ করা যায়না, সেগুলিই রূপ পেয়েছে ছবিতে। এ ভাবনায় আধুনিক বিজ্ঞানে সহজ করে উদাহরণ দেখা যেতে পারে – একজন উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী যখন গান ধরেন তার হাতের উঠানামা এপাশে ওপাশে চালন করা আসলে অপ্রকাশিত ভাবগুলো প্রকাশের জন্য। লক্ষ্য করলে মজার জিনিষ দেখা যাবে — সপ্তকের উপরের দিকে গাওয়া হয়, হাতও উপরের দিকে ওঠে। রবীন্দ্রনাথের রচনায় অনুরূপভাবে জ্যামিতিক ছন্দ পরিমাণ গতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি (বাংলা ও ইংরেজী) এবং শেষের কবিতা দিয়ে কাজ শুরু। গীতাঞ্জলি সম্পর্কে কিছু বলা বাহুল্য পাঠকের কাছে নিষ্প্রয়োজন। শেষের কবিতা রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন—৬৭ বছর বয়সে –বাংলা সাহিত্য এক অনন্য কালজয়ী রচনা। গীতাঞ্জলির রচনাকাল ১৮৯৬-১৯১২ প্রায় ১৬ বছর। শেষের কবিতা লেখা হয়েছিল ৬ মাস ধরে এবং গীতাঞ্জলি লেখার ১৬ বছর পরে। গীতাঞ্জলির অনেক লেখার প্রায় ৩0 বছর পরে শেষের কবিতা লেখা। দুটো বই এর মধ্যে কবির ভাবনার প্রতিফলন সময়ের সাথে সমাজ বিবর্তনের সাথে এইসব পরিমাণ গতভাবে বোঝার দুরুহ বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের ফলাফল সহজ করে বলতে হয়।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দুটো মাপকাঠি একটা হার্টস exponent (H) এবং আর একটা ফ্রাকটাল ডাইমেনশন (W) । মোটামুটিভাবে প্রথম মাপকাঠি দিয়ে বোঝা যায় লেখাটির মধ্যে শব্দগুলি পরস্পরের মধ্যে যে বিশেষ সম্পর্ক আছে সেটা অল্প দুরত্বে (short range) না বেশি দূরত্বে (long range)। দু নম্বর মাপকাঠি কোথায় জ্যামিতিক ছন্দ (জটিলতার নিরিখে) কতটা কম বা বেশি জটিল। এই জটিলতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে গীতাঞ্জলি এবং শেষের কবিতা দুটি কাব্যগ্রন্থে বহুবিভক্ত জ্যামিতিক ছন্দ মেনে চলে। কিন্তু H এবং W এর মানে অনেক পার্থক্য আছে। H এর মান দিয়ে ভাবলে গীতাঞ্জলি, বাংলা এবং ইংরেজী দুটো প্রায় সমান ভাব দূরবর্তী বন্ধক (বা long range correlate) আছে, বাংলা গীতাঞ্জলি, আগেই বলেছি লেখা হয়েছিল ১৬ বছর ধরে আর ইংরেজী অনুবাদ মাত্র দুবছর ধরে। (যদিও ইংরেজী অনুবাদে অনেক নতুন কবিতা আছে)। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর, W এর নিরিখে বিচার করলে, বাংলা গীতাঞ্জলিতে জ্যামিতিক ছন্দের জটিলতা অনেক বেশী ইংরেজী গীতাঞ্জলি চাইতে। পণ্ডিতদের অনেকের মতে ইংরেজী গীতাঞ্জলিতে বাংলার মূলভাব ঠিকমতো প্রকাশিত হয়না। বর্তমান বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ সেটাই সমর্থন করে। শেষের কবিতায়া H এর মান নিরিখে দূরবর্তী বন্ধন গীতাঞ্জলির চাইতে অনেক বেশি। হয়তো অল্প সময় ধরে লেখা হয়েছে বলে W এর নিরিখে শেষের কবিতায় বহু বিভক্ত জ্যামিতিক ছন্দের জটিলতা অনেক অনেক কম। বলা বাহুল্য গীতাঞ্জলিতে অনেক রকমের ভাবনা এবং ভাবনার গভীরতার লেখা কবিতা শেষের কবিতা একটি গদ্য উপন্যাস।
এই মানগুলো সাজিয়ে দেওয়া হলো –গীতাঞ্জলি (বাংলা) – H – .67 W .80, গীতাঞ্জলি (ইংরেজী) – H – .65 W .68, শেষের কবিতা – H – .72 W .47।

আমরা Shakespeare এর সাথে তুলনামূলক একটা আলোচনা করতে পারি – Hamlet কাব্যটির Fractal পরিমিতি অংক করে বার করা হয়েছে যার মান 0.45 এরকম ভাবে – Anthony (Anthony), Cleopatra — 0.55, Coriolanus — 0.47, Hamlet — 0.45, Julius Caesar — 0.52, King Lear —0.55, Macbeth — 0.59, Othello — 0.56, Romeo and Juliet — 0.54, Timon of Athens —0.53, Titus Andranicus — 0.51

স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথের রচনাগুলি জ্যামিতিক ছন্দের জটিলতা অনেক বেশী। শেক্সপিয়রের রচনা থেকে। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের গান নিয়েও এ ধরনের ভাগ হয়েছে এবং হচ্ছে। গান-এর শুধু কথা দিয়ে এবং কথা ও সুর মিশিয়েও এভাবে আপাত সরল ভাগাভাগি যেটা করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গানে—পূজা, প্রেম প্রভৃতি প্রভৃতি ভাগাভাগি জ্যামিতিক ছন্দের নিরিখে করা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞানীরা ভাবছেন ভাষার গঠনশৈলী খবর দিতে পারে কেমন করে আমাদের মস্তিষ্কের তথ্য শাখায়, কেমন করে আমাদের সমাজ সংঘবদ্ধ হয়, এমনকি পৃথিবীর গঠনতন্ত্র কেমন। এও খবর দিতে পারে বিভিন্ন লেখকের অভ্যাসের বিভিন্নতা, পরিমানগতভাবে ভাষাগত ক্ষমতার ক্রমোন্নতি ইত্যাদি। অনেকে প্রশ্ন করছেন – সাহিত্য নিয়ে এই গাণিতিক বিশ্লেষণ কেন ? বিশিষ্ট গণিতজ্ঞ অ্যাণ্ডু রেগন বলছেন –মানুষের জিন গবেষণা থেকে পাওয়া কোটি কোটি তথ্য এমন সব খবর দিয়েছে যা আগে কোনো ধারণাই জানাই ছিল না। হতে পারে সাহিত্য বা গল্পের ক্ষেত্রে এমন সব খবর পাওয়া যাবে ভবিষ্যতে যা আমরা আজকে কল্পনাও করতে পারি না।

আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে ভাষা এমনভাবে নিজের থেকে সাজানো (self organised structure) হয়েছে যা মানুষের মস্তিষ্ক স্বতস্ফুর্তঃভাবে শিশুকাল থেকে অনায়াসে শিখতে পারে। ভাষার গঠন শৈলী (structure), মস্তিষ্কের অন্তর্নিহিত সংগঠন (organization) এরই প্রতিফলন। মানুষের ভাবনা, অনুভূতি ইচ্ছে এবং জ্ঞানকে প্রকাশিত করতে যত শব্দের মানুষের মস্তিষ্কের প্রয়োজন ক্ষমতা অনেক হলেও এই বিরাট শব্দভাণ্ডার সময় করে ধরে রাখা কঠিন। কিন্তু মানুষের প্রয়োজন ঠিকঠাক প্রকাশ করা কয়েকটি সীমিত শব্দ এবং চিত্র দিয়ে খুব জটিল প্রক্রিয়ায় এই প্রকাশ হয়। একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, ভাষা কতকগুলি এলোপাথারি (amorphous), অক্ষর, শব্দ, ধ্বনিরীতি (phoneme) বা রূপমূল (morphemes) এর এলোমেলো মিশ্রণ নয়, খুব জটিল প্রক্রিয়ার অনেক অনেক সুক্ষ্ণভাবে এরা সংঘবদ্ধ হয়েছে – এ জটিল প্রক্রিয়ায় আছে মাত্র স্ব-সাদৃশ্য। যে সব জটিল প্রক্রিয়া এইভাবে বিশ্লেষণ সার্থকভাবে করা যাচ্ছে, বিশৃঙ্খলা তত্ত্বের সাহায্য নিয়ে সেগুলো হলো, সংগীতে, DNA sequence, stock market ওঠা নামা, হৃদকম্পন থেকে ভূমিকম্প, অর্ন্তলীন (Internet), সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়।

রবীন্দ্রনাথের গানেরও অনুরূপ গবেষণা হচ্ছে। গানের ঘরানা বা গায়কী এসব পরিমাণগতভাবে নির্ণয় করে যাবে। এ ধরনের গবেষণা এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দেবে—বিজ্ঞানের চমকপ্রদ আবিষ্কারের মতো। বাংলা ভাষায় এ ধরনের গবেষণা প্রথম, এর ব্যাপ্তি সহজেই অনুমান করা যায়।